প্রকাশিত: Thu, May 30, 2024 3:03 PM
আপডেট: Wed, Apr 30, 2025 12:00 AM

‘ফাইনাল ম্যাচ, ইউ পারফর্ম, হোয়াট হ্যাপেনিং’

দেবব্রত মুখোপাধ্যায় 

জেমি সিডন্স শেষবারের মতো ঢাকা ছাড়ার দিন কয়েক আগের কথা। বস এম এম কায়সার এসাইনমেন্ট দিলেন, সিডন্সের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার নিয়ে একটা দীর্ঘ ইন্টারভিউ করার জন্য। ইংরেজিতে ইন্টারভিউ করা আমার কোনোকালেই স্বস্তির কাজ না। তাও উপমহাদেশীয় হলে কষ্টসৃষ্ট করে করা যায়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ানদের ইংরেজি বুঝতেই আমার জীবন বের হয়ে যায়। তারপরও হরি হরি করে সিডন্সকে বললাম। সে বললো, প্র্যাকটিসের পর বলবে। বসে বসে প্র্যাকটিস দেখছি। আর মনে মনে অনুবাদ করে ইংরেজি প্রশ্ন সাজাচ্ছি। এর মধ্যে দেখি সিডন্স আমার দিকে এগিয়ে আসছে। এসে কী যেন বলা শুরু করলো। আমি একটা বর্ণও বুঝতে পারছি না। আমার বুকের মধ্যে তখন দপ দপ শব্দ হচ্ছে। আর কানের কাছে একটা ঘড়ির কাটা টিক টিক করছে-সিডন্সকে বোধহয় আর পেলাম না। সিডন্স কী সব বলে হাঁটা দিলো ড্রেসিংরুমের দিকে। আমি কিছু না বুঝে পাড় বলদের মতো পেছন পেছন হাঁটলাম। ড্রেসিংরুমে ঢুকে পড়ার সময় বললাম, ‘জেমি, তাহলে কখন কথা বলবে?’

সে আমার দিকে মহা বিরক্ত হয়ে ফিরে তাকালো। তারপর সোফায় বসে থাকা খালেদ মাহমুদ সুজনকে বললো, ‘দ্যাখো, ইংরেজিটাই বোঝে না। তাকে বলো চলে যেতে।’ এই কথাটা বুঝলাম। ইংরেজিতে চলে যেতে বলাটা কতোদূর নিষ্ঠুর, তা ভুক্তভোগী বুঝতে পারবেন। আমি মাথা নিচু করে বেরিয়ে এলাম। সুজন ভাই বেরিয়ে এসে কী যেনো বলে স্বান্তনা দিলেন। এই পুরো ব্যাপারটা দেখেছিলো আরেকজন লোক-ফিজিও মাইক হেনরি। আমি তখন ড্রেসিংরুমের পাশে একটা আড়ালের খোঁজ করছি লজ্জায় মিশে যাওয়ার জন্য। মাইক আস্তে আস্তে আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। অনেকদিন ধরে দেখায় ও জানে, আমি সাংবাদিক। বললো, ‘স্যরি, মেট। তুমি বাজে একটা অবস্থায় পড়েছো।’ আমি বললাম, ‘আসলে আমি ইংরেজি ভালো জানি না তো। তাই...’ মাইক তখন বিরাট একটা দর্শন আওড়ালো, ‘দ্যাখো, মেট। তারপরও তুমি আমার বা জেমির চেয়ে একধাপ এগিয়ে আছো। আমার, জেমির ফার্স্ট ল্যাংগুয়েজ ইংলিশ। আমরা সেটাই বলছি। চাইলেও এক লাইন বাংলা তো বলতে পারি না। তুমি তো কষ্ট করে আমার ভাষায় কথা বলছো। এটাই তোমার ক্রেডিট।’এতে কী আর লজ্জা কমে!

মাইক আমাকে ওই অবস্থায় দেখে বললো, ‘একটু থাকো। তোমার সঙ্গে আরও কথা আছে।’ বলে ভেতরে চলে গেলো। একটু পর বেরিয়ে এলো জেমিকে নিয়ে। জেমি আমার কাঁধে হাত রেখে স্যরি-ট্যরি বললো। তারপর চেপে চেপে বললো, ‘আমি তোমাকে আসলে আগামীকাল হোটেলে আসতে বলেছি। ইন্টারভিউ হবে। চলে আসো।’ জেমি পরদিন আমাকে এক ঘণ্টার বেশি ইন্টারভিউ দিয়েছিলো; যার বেশিরভাগ কথা তাৎক্ষণিক বুঝিনি আমি। রেকর্ড করে পরে উদ্ধার করেছিলাম। গল্পটা এখানে শেষ। তবে এই গল্প থেকে আমি শিক্ষা নিয়েছিলাম। আমি নিতান্ত বিপদে না পড়ে গেলে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের কারো মৌখিক ইন্টারভিউ নিতামই না। মেইলে কাজ সারতাম। আরেকটা কাজ করতাম, কারো ইন্টারভিউ নিতে গেলে, বাংলা বা ইংরেজি যথেষ্ট পড়াশোনা করে কিছু প্রশ্ন অন্তত লিখে নিয়ে যেতাম। আমি খুব ভালো করে জানি, আমি বাংলায় অনেকের চেয়ে ভালো লিখতে পারি। সেই সঙ্গে জানি যে, আমি ইংরেজি পারি না। ইংরেজি একটা ভাষা মাত্র। সেটা না পারা কোনো অন্যায় হতে পারে না। কিন্তু ভাষাটা না জেনে সেই ভাষায় প্রকাশ্যে কিছু করতে গেলে ট্রলের বিষয় হয়ে যেতে পারে। আশা করি ট্রলটা শেষ হবে এবং যিনি এটা সহ্য করছেন, তিনি এই দুঃসময় কাটিয়ে উঠে নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবেন। ২৮-৫-২৪। ফেসবুক থেকে